বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ৷ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার দায়ে ১৭ই সেপ্টেম্বর দেশটির সুপ্রিম কোর্ট আবুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসীর আদেশ দেয় ৷ আবুল কাদের মোল্লা জামাত ই ইসলাম এর একজন নেত্রী স্থানীয় সদস্য ৷ গত ফেব্রুয়ারিতে যখন বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবত জীবন কারাদণ্ড দেয় তখন হাজার হাজার বাংলাদেশী রাস্তায় নেমে আসে এবং তার ফাঁসী দাবি করে ৷ এর পর থেকে সাজার পক্ষ এবং বিপক্ষের ১০ জনের বেশী মানুষ প্রতিবাদ এ মারা যায় ৷
আমেরিকানের কাছে এই সংবাদটি হয়তো অপ্রাসঙ্গিক অথবা অপ্রয়োজনীয় মনে হবে কিন্তু এই ঘটনার অনেক দায় আমেরিকার উপর ও পড়ে ৷ বাংলাদেশের এই সমস্যার উপপত্তি হয় ১৯৭১ সালের দেশটির স্বাধীনতার সময় সেই প্রজন্মের উপর গণহত্যা ও নির্যাতনে যখন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম. নিক্সন এবং হেনরি এ. কিসিনজার, তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরাসরি সমর্থন দেয় ৷
ভারত উপ-মহাদেশ ভাগ হওয়ার সময় ১৯৪৭ সালে একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে একত্রিত পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করা হয় ৷ যেখানে এই পাকিস্থান রাষ্ট্রটির ভৌগোলিক অবস্থান ছিল অত্যন্ত উদ্ভট ভাবে বিভক্ত ৷ প্রভাবশালী পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) এবং পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এর মাঝে ভারত দাড়া হাজার হাজার মাইল বিভক্ত ছিল ৷ পাকিস্তানি রা ব্যঙ্গ করে বলত তাদের দেশ ইসলাম এবং পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দাড়া সংযুক্ত ৷ এই অদ্ভুত বন্দোবস্ত ১৯৭০ পর্যন্ত টিকে ছিল যত দিন না বাঙ্গালীরা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তান এর সামরিক সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয় পায় ৷
২৫ মার্চ , ১৯৭১ , পাকিস্তান আর্মি বিদ্বংসী ভাবে ঝাঁপিকে পরে বাঙ্গালীদের উপর ৷ যুদ্ধের মাঝা মাঝি সময়ে সি. আই. এ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট ২ লাখ মানুষ এর মৃত্যু নিশ্চিত করে (বাংলাদেশ সরকার এর মতে এই সংখ্যা অনেক বেশী, অন্তত ৩০ লাখ) ৷ ১ কোটি মানুষ শরনার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয় ৷ অত্যন্ত করুন জীবন যাত্রা এবং পথে পথে মৃত্যু ছিল তাদের সঙ্গী ৷
সাম্প্রতিক ডিক্লাসিফাইড (কোনো গোপনীয় বিষয়কে আর গোপন না রাখা) দলিল পত্র এবং হয়াইট হাউস তথ্য মোতাবেক জানা যায় নিক্সন এবং কিসিঞ্জার পাকিস্তানী জেনারেলদের হত্যকান্ডে সমর্থন দিয়ে গেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। এই হত্যাকান্ড মানব ইতিহাসে ভয়ঙ্কর তম এর মাঝে একটি ধরা হয় ৷
এটা অবশ্যই সত্যি যে কোনো দেশই , এমনি আমেরিকা ও পৃথিবীর সব ব্যাপক হত্যাকান্ড থামাতে পারবে না -কিন্তু পাকিস্তান এবং আমেরিকা ছিল অত্যন্ত বন্ধু ভাবাপন্ন দেশ ৷ যার ফলে পাকিস্তান বন্ধুত্ততা এর সুবাদে আমেরিকার অস্ত্র এবং সামরিক রসদ ব্যবহার করেছিল বাঙ্গালীদের উপর৷
নিক্সন এবং কিসিঞ্জার খুবই নগন্য ভাবে ও পাকিস্তান সামরিক সরকার এর উপর চাপ প্রয়োগ করে নি ৷ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যখন ২৫ মার্চ হত্যাযগ্য শুরু করে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী, তখনও আমেরিকা, পাকিস্তানি জেনারেলদের সাধারন মানুষ হত্যা না করতে সতর্ক না করার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ তারা পূর্ব পাকিস্তানকে নির্বচনের রায় মেনে নিতে কিংবা পাকিস্তান সামরিক সরকারকে বাঙ্গালীদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে ও চাপ প্রয়োগ করে নাই ৷ তারা পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের উপর নিষেধাঞ্জা জারির সতর্কতা ও জারি করে নি যা কিনা সামরিক জান্তাদের অমানবিক হওয়া থেকে বিরত করতে পারত ৷ এমন কি হত্যকান্ড শুরু হওয়ার পর ও অর্থনৈতিক এবং সামরিক সাহায্য বন্ধের ভয় প্রদর্শন ও করে নি ৷
নিক্সন এবং কিসিঞ্জার এর এই হত্যযগ্য বন্ধে পাকিস্তানকে চাপ প্রয়োগে উৎসাহ না থাকার কারন যে শুধু মাত্র আদর্শিক অবক্ষয় তা নয় ৷ এর পেছনে ছিল সভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি ভারত এবং চায়না এবং পাকিস্তানের বন্ধু ভাবাপন্ন সম্পর্ক ৷ হয়াইট হাউসের টেপ থেকে নিক্সন এর রেগে ফেটে পড়ার দৃশ্য নিক্সনের নিয়মিত নীচ মনোবৃত্তিসম্পন্ন মানুষিকতাকে ও হার মানায় ৷ ওভাল অফিসে নিক্সন , কিসিঞ্জার কে বলে ইনডিয়ানদের দরকার “একটি ব্যপক দূর্ভিক্ষ” হাসতে হাসতে কিসিঞ্জার যোগ করে “মূমুর্ষ বাঙ্গালীদের জন্য যাদের রক্তক্ষরণ হয়”
পশ্চিম পাকিস্তানে নিযুক্ত আমেরিকার সাহসী সিনেট কনসুল জেনারেল আরচার কে. ব্লড এর বিস্তারিত রিপোর্ট সত্যেও হত্যযগ্যের ঘটনা , বাঙ্গালীদের দুর্বিষহ কষ্ট তাদের বিচলিত করে নি ৷ কেনেথ বি. কিয়াটিং ,যখন নিউ ইয়র্কের সাবেক রিপাব্লিকান সিনেটর এবং তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ইন্ডিয়ায় নিযুক্ত ছিলেন তিনি নিজে ওভাল অফিস এ মুখোমুখি হন “গনহত্যা” এর ব্যাপারে ৷
যখন মি. ব্লড এর কনসুলেট এর টেলিগ্রাম আমেরিকান নীতিমালার সাথে ভিন্নতম প্রকাশ করলেন এবং এটিকে গনহত্যা হিসেবে অবহিত করলেন নিক্সন এবং কিসিঞ্জার, মি. ব্লড কে তার পদ থেকে সরিয়ে দিলেন এবং কনটেম্প এর ভয় দেখালেন ৷ কিসিঞ্জার ব্যক্তিগত ভাবে মি. ব্লড কে “উন্মাদ” এবং নিক্সন মি. কিয়েটিং কে “বিশ্বাসঘাতক” হিসেবে অবহিত করলেন ৷
GARY J. BASS এর লেখা Nixon and Kissinger’s Forgotten Shame অবলম্বনে সংশোধিত এবং সংকলিত ৷